তারাবির নামাজের সহীহ দোয়া ও মোনাজাত

 শুরু হচ্ছে মুসলিমদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান।

 ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম রোজা। ইমান, নামাজ ও জাকাতের পরই রোজার স্থান। আরবি ভাষায় রোজাকে সাওম বলা হয়, যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান এক মাস ধরে সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহারে বিরত থেকে রোজা রাখেন।


রমজান মাসের বিশেষ ইবাদত হলো তারাবির নামাজ। তারাবি হলো আরবি শব্দ “তারবিহাহ”র বহুবচন; যার অর্থ বিশ্রাম নেওয়া ও প্রশান্তি লাভ করা। ইসলামি বিধান অনুযায়ী, প্রতি চার রাকাত পর পর তারাবির নামাজে কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এ নামাজে দেহ-মনে প্রশান্তি আসে বলেই একে তারাবির বা প্রশান্তির নামাজ বলা হয়ে থাকে।










রমজানের চাঁদ দেখা গেলে রোজার আগেই তারাবি নামাজ আদায় করা সুন্নত। এমনকি যারা শরিয়তসম্মত কোনো গ্রহণযোগ্য ওজরের কারণে রোজা পালনে অক্ষম, তারাও সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে তারাবির নামাজ আদায় করবেন বলে হাদিসে রয়েছে। পুরুষদের জন্য তারাবির নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নত। নারীরা বাড়িতে আদায় করলেও চলবে।


রমজান ছাড়া বছরের আর কোনো মাসে তারাবির নামাজ নেই। দীর্ঘ ১১ মাস ধরে তারাবি নামাজের চর্চা না থাকায় অনেকেই এ নামাজের নিয়ম, প্রচলিত দোয়া ওমোনাজাত ভুলে যান। ২০ রাকাত তারাবি নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, যা ওয়াজিবের কাছাকাছি। বাংলাদেশে দুই ধরনের তারাবির নামাজ প্রচলিত। একটি হলো সুরা তারাবি এবং অন্যটি হলো খতম তারাবি। সুরা তারাবি হলো পূর্ণ কোরআন শরীফ না পড়ে বিভিন্ন সুরা দিয়ে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা। খতম তারাবি হলো রমজান মাসে সম্পূর্ণ কোরআন সহকারে তারাবি আদায় করা। উভয় পদ্বতিই ইসলাম অনুমোদন করে।


রমজান মাস পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস। আর খতম তারাবির নামাজের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য কোরআন তিলাওয়াত করা ও শোনা। এ নামাজে পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার পাঠ করা সুন্নত। সুরা তারাবি পড়লেও ২০ রাকাত পড়া সুন্নত। একা পড়লেও ২০ রাকাতই পড়া সুন্নত। নারীদের জন্যও ২০ রাকাত তারাবি সুন্নত।


আরবি এবং বাংলা দুইভাবেই তারাবির নামাজের নিয়ত করা যাবে। আরবি নিয়ত হচ্ছে, নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার। অন্যদিকে, বাংলা নিয়ত হচ্ছে- আমি কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবি সুন্নত নামাজের নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার।


এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে তারাবি নামাজ আদায় করতে হয়। এভাবে চার রাকাত আদায় করার পর একটু বিশ্রাম নেওয়া। তাসবিহ-তাহলিল পড়া বা কিছু সময় বিরতি নেওয়া উত্তম। বিশ্রামের সময় তাসবিহ তাহলিল পড়া, দোয়া-দরূদ ও জিকির আজকার করা। এরপর আবার দুই দুই রাকাত করে আলাদা আলাদা নিয়তে তারাবি আদায় করা।


তারাবির নামাজের দোয়া হলো- সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।


তারাবির নামাজের মোনাজাত হলো- আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন


অনেকেই ৪ রাকাত পর পর মোনাজাত করে থাকেন। 

আবার অনেকে পুরো নামাজ শেষ করে মোনাজাত একসঙ্গে মোনাজাত দেন। তবে নামাজ শেষ করে বিতর পড়ে মোনাজাত দেওয়াই উত্তম। রমজান জুড়ে বিশ্বনবীর এ দুটি ইসতেগফার  বেশি বেশি পড়া জরুরি। 

.একটি হলো- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা'ফু আ'ন্নি। 

.অন্যটি হলো- আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ'বদুকা ওয়া আনা আ'লা আ'হদিকা ওয়া ওয়া'দিকা মাসতাত্বা'তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা'তু আবুউলাকা বিনি'মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।


এশার নামাজের পর থেকে ফজরের ওয়াক্তের আগপর্যন্ত তথা সেহরির শেষ সময় পর্যন্ত তারাবির নামাজ আদায় করা যায়। ২০ রাকাত তারাবির নামাজ প্রতিষ্ঠিত নিরবচ্ছিন্ন সুন্নত। যেহেতু এটি সুন্নত নামাজ, তাই কোনো কারণে পড়তে না পারলে অসুবিধা নেই। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে রোজাদারের উচিত তারাবি নামাজ পড়তে সর্বাত্মক চেষ্টা করা।


রোজার সঙ্গে তারাবির নামাজের অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়বে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে (বুখারি, হাদিস: ৩৬)।” 


তারাবির নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, রাকাত তারাবি আদায় করে বিশ্রাম বা বিরতির পর  ব্যাপক প্রচলিত একটি দোয়া রয়েছে, যা দেশের প্রায় মসজিদে পড়া হয়। আর সেটি হলো-আর আমি তোমাদের জন্য তারাবি নামাজকে সুন্নাত করেছি। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে দিনে রোজা পালন করবে ও রাতে তারাবিহ নামাজ আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হবে, যেরূপ নবজাতক শিশু মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়

 (নাসায়ি, পৃষ্ঠা: ২৩৯)।”

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url