যে সব খাবার খেলে ত্বক ভালো থাকে
ঈদে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনে ত্বকের যত্নে আমাদের নানান দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। অনিদ্রা আর অনিয়ন্ত্রিত খাবারের ফলে ত্বকে দেখা দেয় ব্রণ এবং নিস্তেজের ছাপ। সেইসাথে রুক্ষ হয়ে যায় চামড়া, উজ্জ্বলতা যায় কমে।
খাদ্যাভ্যাসের স্বাস্থ্য টিপসের এই লেখায় আমরা আলোচনা করব ত্বক সুন্দর করতে কোন ধরনের খাবার খেতে হবে। আমরা পুরো নিবন্ধে ৬ ধরণের খাবারের কথা এবং ত্বকের যত্নে সেসব খাবারের ভূমিকা নিয়ে বর্ণনা করব।
ত্বক উজ্জ্বল করতে, ব্রণমুক্ত রাখতে এবং রোদে পোড়া ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা করবে এই খাবারগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষ এবং নারী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য খাবারগুলো। আর লেখার শেষাংশে গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস দিব যেগুলো জানা সুস্থ এবং সুন্দর ত্বক মেইনটেইন করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এক, লাল রঙের ফল ও সবজি
যেমন: টমাটো, তরমুজ, পাকা পেঁপে, লাল শাক ও ডালিম। এগুলোতে আছে লাইকোপেন রিচ (Lycopene Rich) নামে এক ধরনের উপাদান; যেটা ইন্টার্নাল সানব্লকার হিসেবে ত্বকে কাজ করে। রোদে অতি বেগুনি রশ্মি ত্বক ডেমেজের অন্যতম প্রধান কারণ।
এটা ত্বকের উজ্জ্বলতা কমিয়ে দেয়। আমাদের কোলজেন ডেমেজ করিয়ে দিয়ে ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমিয়ে দেয়, এতে অল্প সময়ে ত্বকে বয়সের ছাপ বেড়ে যায়। সুতরাং রোদের ক্ষতি থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করতে লাল রঙের ফল ও সবজি বেশি করে খেতে হবে।
টমেটোর ক্ষেত্রে একটা টিপস: টমাটো রান্না করে খেলে আমাদের শরীরে লাইকোপিন আরো বেশি কার্যকর হয়। তাই রান্নার সময় ডালে অথবা তরকারিতে টমাটো দিয়ে খেলে আমাদের শরীরের জন্য বেশি উপকার হবে।
দুই, বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও সিড
যেমন: বাদামের মধ্যে কাঠবাদাম, চীনাবাদাম এবং কাজুবাদাম আর সিডের মধ্যে চিয়া সিড (তোকমা), ফ্ল্যাক্সসিড (তিসির বীজ) এবং পাম্পকিন সিড (কুমড়ার বীজ)। এগুলোতে আছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ভিটামিন-ই।
প্রতিদিন এয়ার পলিউশন আর ধুলোবালি থেকে স্কিনে ফ্রি-রেটিক্যাল তৈরি হয়, এবং ত্বকের অক্সিডেশন হয়। যার কারণে ত্বক ডেমেজ হয়ে যায়, দেখতে নিস্তেজ লাগে, চামড়ায় ভাজ পড়ে যায়। ভিটামিন-ই এই ফ্রি-রেটিক্যালকে ধ্বংস করে ত্বককে অক্সিডেশন থেকে রক্ষা করে।
অক্সিডেশন কী—এটা বুঝতে একটা আপেলের কথা চিন্তা করুন। ধরুন আপেলটিকে কেটে খোলা স্থানে রেখে দেওয়া হলো। ফলে লক্ষ্য করবেন, আপেলটি ব্রাউন বা কালচে হয়ে যা, সে প্রসেসটাই হলো অক্সিডেশন।
আর আস্ত অবস্থায় আপিলের ত্বক অক্সিডেশন থেকে রক্ষা করে ঠিক একইভাবে বিভিন্ন ধরনের বাদাম এবং সীড আমাদের ত্বকে অক্সিডেশন থেকে রক্ষা করে। আর ন্যাচারাল সিডে আছে জিংক যা আমাদের ত্বককে ব্যাক্টোরিয়া এবং ভাইরাসের সাথে ফাইট করতে সাহায্য করে।
এজন্য ত্বকে ব্রণ এবং লাল দাগমুক্ত করতেও সীড খাওয়া বেশ কার্যকরী।
সতর্কতা: তবে মনে রাখতে হবে, বাদামের ক্ষেত্রে একসাথে অনেক বাদাম খাওয়া যাবে না; কারণ বাদামে উচ্চ ক্যালরি থাকে। দিনে একমুঠো বা ৫-১০টার বেশি না খাওয়াই ভালো।
তিন, সবুজ রঙের ফল ও শাক
যেমন; পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, কাঁচা মরিচ, ক্যাপসিকাম এবং সব ধরনের সবুজ শাক। এগুলোতে আছে অনেক পরিমাণ ভিটামিন-সি।
যা আমাদের কোলজেন প্রোডাকশন বাড়াতে সাহায্য করে। কোলজেন আমাদের শরীরের একটা প্রোটিন, যা এসেছে গ্রীক কোলাজ থেকে। যার আক্ষরিক অর্থ আঠা। কোলজেন অনেকটা আঠার মতোই আমাদের ত্বকের একটা টিস্যুর সাথে আরেকটা টিস্যুকে আটকিয়ে রাখে।
এতে করে চামড়া ঝুলে পড়ে না। চামড়ার ইলাস্টিসিটি বাড়ায়, ফলে আমাদের ত্বকে তারুণ্যের ছাপ ধরে রাখতে কোলজেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও সবুজ ফল এবং শাকসবজি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বকে লাল দাগমুক্ত রাখত সাহায্য করে।
চার, কমলা রঙের সবজি ও ফল
যেমন: গাজর, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলো এবং পাকা আম। এগুলোতে আছে ভিটা ক্যারোটিন, যা দেয় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ। ভিটামিন-এ আমাদের ত্বককে রোদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, এর অভাব হলে আমাদের ত্বক ড্রাই হয়ে যায়।
এতে ত্বকে ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। কসমেটিকস ক্রিমগুলোতে দেখবেন ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই থাকে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার জন্য খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে আমাদের ত্বককে ভেতর থেকে নরেশ করতে হবে। এতে করে ত্বকে নতুন কোষ তৈরির সময় শরীরের ভেতর বায়োকেমিস্ট্রির পরিবর্তন আসবে, ফলে ত্বকে ন্যাচারালি গ্লো স্কিন মেইনটেইন করা যাবে।
পাঁচ, মাছ ও মাংস জাতীয় আইটেম
এই তালিকায় আছে ডাল, মাছ, ডিম, মুরগীর মাংস। এগুলোতে আছে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন, যা সুস্থ এবং সুন্দর স্কিন গঠনে প্রয়োজন। এছাড়াও এগুলোতে আছে কিছু অ্যামিনো এসিড, যা ভিটামিন-সি এর পাশাপাশি কোলজেন তৈরির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বয়সের সাথে সাথে আমাদের দেহে কোলজেন প্রোডাকশন কমে যায়। তাই কোলজেন তৈরির উপাদানগুলো খাবারের মাধ্যমে নিয়মিত সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা জরুরি।
ছয়, হাইড্রেশন
সর্বশেষ পয়েন্টটি হলো হাইড্রেশন। দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়া সুস্থ শরীর এবং ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডি-হাইড্রেশন হলে ত্বকের কোমলতা কমে যায়, স্কিন ড্রাই হয়ে যায়, ত্বক দেখতে নিস্তেজ দেখায়।
এছাড়া পানি খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান শরীরে সরবরাহ করতে সহায়তা করে। সেইসাথে অনেক ক্ষতিকর উপাদান শরীর থেকে দূর করে এবং আমাদের শরীরে রক্ত সরবরাহ সচল রাখতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন আমাদের কমপক্ষে ৬-৮ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত।
মনে রাখতে হবে আমরা যা-ই খাই তার প্রভাব পুরোপুরিভাবে আমাদের শরীরের উপর পড়ে। তবে কোন খাবারই রাতারাতি ত্বকের পরিবর্তন করবে না। তাই সুন্দর ত্বকের জন্য খাবারের বিষয়টি মনে রাখতে হবে।
আমাদের ত্বকের পুরাতন কোষ থেকে নতুন কোষ তৈরি হতে প্রায় ৬-৮ সপ্তাহ সময় লাগে, তাই যে খাবারগুলোর কথা বলেছি ৮ সপ্তাহের অধিক নিয়মিত নিয়মিত খেলে ত্বকের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে।
কিছু স্পেশাল টিপস:
প্রথমত, ত্বকে বারবার হাত না দেওয়া; কারণ আমাদের হাতে অনেক রোগ জীবাণু থাকে যা ত্বকের ক্ষতি করে। ত্বক ধরতে হলে আগে হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। বাহির থেকে আসার পর ফেইস ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। কারণ নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে, এতে শরীরে অন্যান্য অঙ্গে পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেয়।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ টিপস হলো, নিয়মিত ঘুমানো। প্রতি রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের সময় স্কিনের যে ডেমেজ হয় সেগুলো পুনরায় সচল হয়, স্কিনে কোলজেন তৈরি হয়, স্কিনের গ্লো বৃদ্ধি হয়। ঘুম কম হলে স্কিনের স্কিন নিস্তেজ হয়ে যায় এবং মলিন দেখায়। তাছাড়া সারাদিন ক্লান্তি লাগবে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url