রোজার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা

রমজান ইসলামের একটি পবিত্রতম মাস। হিজরী ক্যালেন্ডার এর নবম মাস হিসেবে পরিচিত। এ মাসেই মহাবিশ্বের মহাবিস্ময় মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এ মাসেই জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তান এবং দুষ্ট জ্বীনদেরকে বন্দী করে রাখা হয়। এ মাস রহমতের মাস, মাগফিরাতের মাস, নাজাতের মাস, তাওবার মাস, সংযমের মাস, ইবাদতের মাস। এ মাসেই রয়েছে লাইলাতুল কদর যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। পবিত্র রমজান মাসের রোজা একটি ফরজ ইবাদাত। রমজান মুমিনের ইবাদতের সিজন। এই মাসের ইবাদাতের মাধ্যমেই জীবনের গতি পরিবর্তন ও একটি পবিত্র জীবন সূচনা করার সুবর্ণ সুযোগ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতা।



রমজানের ফরজ রোযা ছাড়াও আরো রোযা আছে। যেমন, মান্নতের ওয়াজিব রোযা এবং সুন্নত ও নফল রোযা। রোযা রাখলে ক্ষুধা-পিপাসার কারণে শারীরিক কষ্ট হয়। এ কষ্টের বিনিময় আছে। রোযার লক্ষ হলো, আল্লাহর সন্তোষ অর্জন, জান্নাত লাভ এবং জাহান্নাম থেকে
মুক্তি। এতো গেল রোযার পরলৌকিক কল্যাণ। রোজার জাগতিক কল্যাণও অপরিসীম। এর মধ্যে সুস্বাস্থ্য লাভ অন্যতম দিক। রোযা ও স্বাস্থ্য অঙ্গা অঙ্গিভাবে জড়িত। রোযার মাধ্যমে স্বাস্থ্যের উপকার হয় এবং বহু রোগ- প্রতিরোধক ও আরোগ্যমূলক চিকিৎসা লাভ করা যায়। আজকের উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞান একথা স্বীকার করে।
কিন্তু ১৪০০ বছর আগে রোযার এরূপ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার চিন্তাও করা সম্ভব ছিল না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বীকৃতির বহু আগে রোযা বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে চালু হয়েছে। এটা
কিসের প্রমাণ দেয়? ইসলাম যে মহাবিজ্ঞানী আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে, এটাই তার প্রমাণ।

রোযা একটি কষ্টকর ইবাদত হলেও তাতে কল্যাণ রয়েছে। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ বলেন: صوموا تصحوا ‘রোযা রাখো, সুস্থ থাকবে। ([মুসনাদে আহমদ])

রোযার মাধ্যমে আজ পর্যন্ত ২১টি রোগের প্রতিকারের রহস্য আবিষ্কৃত হয়েছে। জার্মানীর এক স্বাস্থ্য ক্লিনিকের গেইটে লেখা আছে ‘রোযা রাখো, স্বাস্থ্যবান হবে।’ খৃস্টান জার্মানীসহ অন্যান্য খৃস্টান চিকিৎসকেরাও রোযার উপকারিতার বিষয়ে বেশ কিছু গবেষণা করেছেন।
বিশ্বের অনেক দেশে রোযার মাধ্যমে ‘চিকিৎসা ক্লিনিক’ খোলা হয়েছে ।
রোজায় কম খাওয়ার ট্রেনিং হয়, রোযা ছাড়াও ইসলাম কম খাওয়াকে উৎসাহিত করে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি বলেন: ‘পেট ভর্তি করে খাওয়া অপেক্ষা মানুষের জন্য মন্দ দ্বিতীয় কোন কাজ রাসূলুল্লাহ
নেই। আদম সন্তানের টিকে থাকার জন্য কয়েক লোকমা খাবারই যথেষ্ট। যদি তা না করে তাহলে, পেটের এক তৃতীয় অংশ খাবার, এক তৃতীয় অংশ পানি এবং অপর তৃতীয় অংশ শ্বাস- প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখা দরকার।’ সুনানে ইবনে মাজাহ।

রোযা রাখলে এবং খাদ্য গ্রহণ না করলে শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পদ্ধতিতে কাজ চলে।
১. গ্লাইকোজেন: শরীরের ভেতরে পুঞ্জীভূত স্নেহ এবং ধমনীতে মওজুদ চর্বিকে কাজে লাগায়। ফলে, প্রথমে পুঞ্জীভূত গ্লাইকোজেনের মওজুদে প্রভাব পড়ে। এটা শেষ হলে পুঞ্জীভূত দেহের প্রভাব পড়ে।

২. শরীরের ভেতর জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে সক্রিয়ভাবে সুপ্ত রোগগুলোর চিকিৎসা শুরু করে।
রোযার ফলে কি কি রোগের চিকিৎসা হয় এবং কিভাবে একজন মানুষ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারে, আমরা এ বিষয়ে উল্লেখিত হাদীসকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আলোচনা করবো। প্রতিবছর বিরতিহীনভাবে একমাস রোযা রাখলে মানব শরীরের উপর এর বিরাট প্রভাব
পড়ে। রোযা শারীরিক ও মানসিক প্রভাব বিরাট।

রোজার উপকারিতাসমূ

১. জৈব বিষ (Toxin) ধ্বংস হয়।


২. শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।


৩. ওজন ও মেদ-ভুঁড়ি কমে এবং এলঝেইমার বা পারকিনসন্স রোগ থেকে বাঁচা যায়।


৪. রোযার ফলে হজম ও পরিপাক যন্ত্রগুলো বিশ্রাম লাভ করে নতুন শক্তি অর্জন করে।


৫. রোযা কিডনীতে পাথর সৃষ্টিতে বাধা দেয়।


৬. চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।


৭. বাত রোগের চিকিৎসা।


৮. রক্তে কোলেষ্টেরল কমায়।


৯. রক্ত স্বল্পতা ও রক্ত শূন্যতা দূর হয়।


১০. কঠোর স্নায়ু ব্যথার উপশম হয়।


১১. ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে আসে।


১২. রোযা সকল Infection এবং টিউমারের জন্য প্রতিরোধক


১৩. হায়াত বাড়ে ও বার্ধক্য দেরীতে আসে।


১৪. পুরুষ হরমোন বৃদ্ধি পায়।


১৫. দাঁত ও মাড়ির উপকার হয়।


১৬. পেপটিক আলসার হ্রাস পায়।


১৭. তারাবীহর নামায মেরুদণ্ডের Flexibility বাড়ায়।


১৮. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।


১৯. যৌন রোগ থেকে বাঁচা যায় ।


২০. স্নায়ুতন্ত্র শান্ত থাকে।


২১. রমজান মাসে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যার পরিমাণ হ্রাস পায়।

পাঠক আশা করি চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url