দ্রুত দোয়া কবুলের আমল, সময় এবং স্থান

দ্রুত দোয়া কবুলের আমল, সময় এবং স্থান

দোয়া কে বলা হয় ইবাদতের সারাংশ। ইবাদতের মগজ।  দোয়া’র গুরুত্ব অপরিসীম। আল কুরআনুল কারীমে আল্লাহু তা’আলা বিভিন্ন নবী – রাসুল আলাইহিমুসসালামের বিপদগ্রস্থ হবার এবং  দোয়া’র দ্বারা সে বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার ঘটনা উল্লেখ্য করেছেন। কাজেই আমরা সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে সর্বদা আল্লাহর কাছে  দোয়া করবো। 


দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার উত্তম সময় এবং স্থান গুলো আসলে কি

আবার অনেকে মনের আশা পূরণের দোয়া খুঁজেন। আমরা সবাই জানি দোয়া করার অনেক ফজিলত এবং দোয়া করলে আল্লাহ তায়লা খুশি হন। আসলে প্রতিটি দোয়া কবুল হওয়ার পিছনে কিছু কিছু বিষয় থাকে।আপনার জানা দরকার যে কোথায়, কখন, কীভাবে দোয়া করলে আপনার দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে। আজকের এই লেখায় এইরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দোয়া কবুলের কারণ গুলোকে দুটি বড় ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে যথা:
  • সময়
  • অবস্থা/স্থান
সময় এবং স্থান দুটি বিষয় নিয়েই সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হবে। আমি কুরআন-হাদিস অনুযায়ী সংক্ষিপ্তভাবে বিষয় গুলো উত্থাপন করার চেষ্টা করছি। আর তার আগে জেনে নিন, কেন আমাদের দোয়া কবুল হয় না।

দোয়া কবুলের আমল

যে অবস্থায় দোয়া কবুলের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি :

মজলুম অবস্থায় দোয়া: যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে অত্যাচারিত হয়েছে অর্থাৎ যিনি মজলুম ব্যক্তি, তার দোয়া কবুল হয়।
আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় দোয়া: আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া কবুল হয়। এ সময় দোয়া কবুলের বিষয়টি হাদিসের অনেক জায়গায়
বর্ণিত করা হয়েছে।
অসুস্থ ব্যক্তি দোয়া: একজন ব্যক্তি যিনি কোন দুর্যোগে পরে গুরুতর জখম বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন তার দোয়া কবুল হয়।
মুসাফিরের দোয়া: মুসাফির ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়। সফর অবস্থায় সে যে দোয়াই করে আল্লাহ তায়ালা তার সে দোয়াই কবুল করে নেন। তবে এক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই তার বাসস্থান হতে নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। যেমন: হানাফি মাজহাবের ক্ষেত্রে তার দূরত্ব ৪৮ মাইল।
রোজাদারের দোয়া: রোজাদার ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়। রোজাদার ব্যক্তির দোয়াও আল্লাহ-তায়ালা ফেরত দেন না।
কোরআন তেলাওয়াতের দোয়া: কুরআন পাঠরত ব্যক্তি বা যিনি খানিকক্ষণ আগে কুরআন পাঠ করেছেন তার দোয়াও কবুল হয়।
হজ্ব বা জিহাদ এমন ব্যক্তির দোয়া: হজ্ব বা উমরা বা জিহাদ সম্পাদন করছেন এমন ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়। দোয়া কবুলের কার্যকরী সুযোগ হচ্ছে হজ্বের সফর। হজ্বের সফরে দোয়া কবুলে হওয়ার বিশেষ কিছু স্থান রয়েছে। যে স্থান গুলোতে দোয়া করলে সেই দোয়া কবুল হয়।
অনুপস্থিতিতে দোয়া: যখন কেউ কোন অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য দোয়া করে তার দোয়া কবুল হয়। কারণ যখন কেউ কোন অনুপস্থিত ব্যক্তির কারো জন্য দোয়া করেন তখন ফেরেস্তাগণ উপস্থিত ব্যক্তির হয়ে আমীন বলে দেন।
জিকিরকারী দোয়া: জিকির রত ব্যক্তির দোয়া দোয়া কবুল হয়।
ন্যাপরায়ণ শাসক: কোন ন্যায়পরায়ণ শাসক যদি আল্লাহর কাছে দোয়া করে তখন তা কবুল হয়।
পিতা-মাতার দোয়া: যখন কোন পিতা-মাতা তার সন্তানের জন্য দোয়া করে তার দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করে নেন।
উপরে উল্লেখকৃত এই অবস্থাগুলোতে যদি থাকেন তবে আপনার দোয়া কবুলের সম্ভাবনা অনেক বেশী। আপনি যদি এসব সম্ভাবনা পেয়ে থাকেন তবে তা হাতাছাড়া করবেন না আশা করি।

যে সময় গুলোতে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি 

দোয়া কবুলের সম্ভাবনামত মূহুর্ত ও স্থানগুলো :

1. কদরের রাতঃলাই-লাতুল-কদরের রাত, এ রাত্রিকে হাজার রাত্রির চেয়েও উত্তম রাত্রি বলা হয়ে থাকে।আর এ রাতে যদি কেউ কোন দোয়া করে তবে তার সে দোয়া কবুল হয়।
2. ফরজ নামাজের পরপরঃ নামাযের শেষ বৈঠকের সময়। তাশাহুদ পাঠ করার পর থেকে নামায শেষ করার পূর্ব পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়।
3. শেষরাতে (রাতের শেষ তৃতীয় ঃ রাতের শেষ প্রহরের সময়। অর্থাৎ মাগরিব থেকে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত রাত কে তিনটি অংশে বিভক্ত করুন। এবং রাত্রির শেষ অংশটিতেই দোয়া কবুলের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।
4. প্রতি রাতে নির্দিষ্ট একটা সময় (অজানা)
5. আজান ও ইকামাতের মাঝের সময়
6. আজানের পরপর
7. নামাজের জন্য এবং যুদ্ধের জন্য দাঁড়ানোর সময়
8. বৃষ্টির সময়ঃবৃষ্টি পড়ার সময়, বিশেষ করে যখন মুষলধারে হয় ঠিক সে সময় দোয়া করলে সে দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করে নেন। কারণ বৃষ্টি হল আল্লাহর নিয়ামত।
9. ময়দানে যুদ্ধ যখন প্রচণ্ড হয়
10. জুমার দিনের শেষ সময় (আসরের পর মাগরিবের আগে) ঃজুমার দিন খুতবা দেওয়া থেকে আরম্ভ করে সালাত শেষ করা পর্যন্ত এবং বিকেল বেলায় আসর এর পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ বলে থাকেন মাগরিবের আজানের ঠিক আগের সময়টিতেও দোয়া কবুল হয়।
11. জুমার সালাতের পরপর
12. জুমার দিনে খুব সামান্য কিছু (অজানা)সময়। [কারও মতে সেটা দুই খুতবার মাঝে ইমামের বসার সময়টুকু]
13. সাহাবায়ে কিরামের ঘটনায়, বুধবার যোহর থেকে আসরের মাঝে দোয়া কবুলের কথা পাওয়া যায়।
14. কল্যাণের নিয়তে জমজমের পানি পান করার সময়। (অর্থাৎ কোনো কল্যাণের নিয়তে জমজম পান করলে) ঃ জমজম পানি পান করার সময় দোয়া কবুল হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোন ব্যক্তি জমজম পানি পান করার সময় যে দোয়াই করবে, তার সেই দোয়াই কবুল হবে।
15. দোয়ায়ে ইউনুস পাঠ করার পর
16. কোনো ব্যক্তি মারা যাওয়ার সময় উপস্থিত স্বজনদের দোয়া
17. নামাজ শেষের দোয়ায়ে মাসুরা
18. ইসমে আযম পাঠ করে একনিষ্ঠভাবে দোয়া করলে। (ইসমে আজমের ব্যাপারে আলেমদের দীর্ঘ আলোচনা আছে, সেসব দেখে নেয়া যেতে পারে। সবগুলো বিবেচনা করলে বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলার এরকম বেশ কিছু ইসম ও সিফাত আছে, যেগুলো পাঠ করে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।)
19. আরাফার ময়দানে আরাফার দিনে
20. চাশতের সময়, যোহরের ওয়াক্ত হওয়ার আগে।
21. যিকরের মজলিসে
22. মোরগ ডাকার সময়। (কারণ ফেরেশতাদের দেখলে মোরগ ডাকে)
23. হজ্বে পাথর নিক্ষেপে দিনগুলোতে, জামরায় পাথর নিক্ষেপের ৩টি স্থানে।
24. কা’বার ভেতরে, চারপাশে এবং হাতিমের মাঝে।
25. হজ্জের সময় সাফা এবং মারওয়া পাহাড়ে।
26. কোরবানীর দিন মুযদালিফায় (মাশআরুল হারামে)।

দোয়া কবুলের দোয়া। ইসমে আজম?

এরপরে বিভিন্ন হাদিস থেকে আমরা কয়েকটি দোয়ার সংকলন করেছি, এগুলো পাঠ করে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।
নিচের দোয়াগুলো আপনারা দোয়ার শুরুতে বা শেষে পড়ে সাথে অন্যান্য আদব মেনে দোয়া করুন। ইনশাআল্লাহ দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বাড়বে। সম্ভবত এগুলো দোয়ার শুরুতে পড়লেই বেশি ভালো। প্রত্যেকটা দোয়া আলাদা আলাদা হাদিসের। তাই আপনি চাইলে একটা বা একাধিক দোয়াও পড়তে পারেন। চাইলে কয়েকবার করে পড়তে পারেন। প্রথম দুটি দোয়াকে হাদিসে ইসমে আজম-ও বলা হয়েছে।
اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيْعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ
27.  অর্থ: ইয়া আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। তুমিই সমস্ত প্রশংসার মালিক, তুমি ছাড়া আর কোন দানকারী ইলাহ নাই, তুমিই আসমান ও যমীনসমূহের সৃষ্টিকরী, হে মহান শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ও মহান দাতা, হে চিরঞ্জীব, হে অবিনশ্বর।
اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنِّيْ أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ ‏
এটার সংক্ষিপ্ত রূপও পাওয়া যায়, যা এরকম :
اللَّهُمَّ إنِّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
28.  অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি এবং জানি যে, তুমিই আল্লাহ। তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন মা’বূদ নেই। তুমি এক ও অদ্বিতীয়। তুমি অমুখাপেক্ষী ও স্বনির্ভর। যিনি কাউকে জন্ম দেননি। কারো থেকে জন্মও নেননি। যার সমকক্ষ কেউ নেই।
لَا إِِلَـٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
29.  অর্থ: তুমি ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র। আমি নিশ্চয় যালিমদের দলভুক্ত (অপরাধী)।
30. নামাজ শেষ করে – সুবহানাল্লাহ (১০বার) আলহামদুলিল্লাহ (১০বার) আল্লাহু আকবার (১০বার) – পড়ার পরে দোয়া করা।
ইনশাআল্লাহ আপনার দোয়া করার সময় সেই নির্দিষ্ট ঘটনাটির সাথে মিলে যেতে পারে এবং আপনার দোয়াটিও কবুল হতে পারে। জাযাকাল্লাহ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের দোয়াকে কবুল করুক। আমিন ।
 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url